মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
মোঃ জহিরুল ইসলাম সবুজ, আগৈলঝাড়া:
বরিশালের আগৈলঝাড়া সরকারী নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্টের নামে
স্বেচ্ছাচারি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের অবৈধ ভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষ’র টাকা আদায়ের কথা জানেন না বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি। ইউএনও বলেছেন টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করাবেন।
উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজের বিদ্যালয় শাখার অভিভাবকেরা অভিযোগে জানান, ২০২১ সালের এসএসসি পরীার্থীদের ১ম ধাপের তিন সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে সরকার। পয়সা স্কুলের অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ৫টি প্রশ্নের একটি অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে বিনা রশিদে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪শ টাকা করে আদায় করেছেন। তাতে শিক্ষার্থীদের এক পিচ কাগজও দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
মহামারী করোনা কালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য সরকারীভাবে টাকা নেয়ার কোন নির্দেশনা না থাকলেও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এলাকার গরীব অভিভাকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এই টাকা আদায় করছেন। বিদ্যালয়টিতে নতুন পুরান মিলে এবছর ১৯৯জন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। ৪শ টাকা হিসেবে অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়া অর্থের পরিমান দাড়ায় ৭৯ হাজার ৬শ টাকা।
স্থানীয়রা আরও জানান, বরাবরই এই প্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের অবৈধভাবে টাকা আদায়ে কারণে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। এভাবে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের জন্য সাবেক ইউএনও বিপুল চন্দ্র দাস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে রিপোর্ট জমা দিলে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে উপজেলা সাবেক নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস এক বছরের জন্য এসএসসি পরীক্ষার সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে অবৈধভাবে অর্থ আদায়ের জন্য শোকজ করেন।
অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান শোকজের জবাব দিয়ে, আদায় করা অর্ত ফেরত দিয়ে ইউএনও বিপুল দাসের কাছে ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না মর্মে মুচলেকা দিলেও নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন নি তিনি। নিজের স্বেচ্ছাাচারিতার কারনেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে বিভিন্ন সময়ে অর্থ আদায় করে আসছেন তিনি।
নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকার লোকজন জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে বিদ্যলয়ের জমিদাতা সদস্য হিসেবে স্থানীয় একজনের বৈধ আবেদন অগ্রাহ্য করে ২০১৮সালে নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করান অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান। ওই আবেদনকারী তার অধিকার ফিরে পেতে ন্যায় বিচারের জন্য আদালতের শরনাপন্ন হলে বিজ্ঞ আদালত ১১/১৫ মামলায় নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই থেকে গত ছয় বছর পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে নির্বাচিত অভিভাবক না আসায় এবং বিচারাধীন মামলায় সময়ের প্রার্থনা করে মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার সুযোগ নিয়ে মিজানুর রহমান সেচ্ছচারিতার মাধ্যমে তার একক কর্তত্ব আর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে আসছেন বিদ্যালয়টিতে।
অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান ফোনে বিনা রশিদে টাকা নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য সব টাকা নেয়া হয়নি। টিউশন ফি এবং অন্যান্য চার্জ বাবাদ টাকা নেয়া হয়েছে। বিনা রশিদে টাকা নেয়ার কারন সম্পর্কে তিনি এই প্রতিনিধিকে বললে- তিনি টাকার রশিদ দিয়ে দিবেন। টিউশন ফি এবং অন্যান্য চার্জ বাবাদ টাকা নিলে কেন ফেরত দিবেন এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
অ্যাসাইনমেন্টের নামে ৪শ টাকা করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করার বিষয়ে বিদ্যালয় এডহক পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন ফোনে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তার কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০জুন। তাই হয়তো তাকে কিছুই জানায়নি অধ্যক্ষ। এভাবেই একক সিদ্ধান্ত নিয়ে মিজুানুর রহমান অনেক কাজ করেন জানিয়ে তার নেয়া অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য মিজানুর রহমানকেও বলবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ বলেন- অ্যাসাইনমেন্টের নামে কোন টাকা আদায় করতে পারবে না কোন স্কুল। যদি মিজানুর রহমান নিয়ে থাকেন এর দায় দ্বায়িত্ব তিনি নিবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাশেম বলেন-সরকারী নির্দেশনার বাইরে কোন টাকা আদায় করা হলে তা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবেন জানিয়ে বিসয়টি তদন্ত সাপেক্ষ আইনহত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।